মোস্তাফা জব্বার
॥ চার ॥
এই কথাটি বাংলাদেশের কোন মানুষকে বলে দিতে হবে না যে, আমাদের ভূমির পরিমাণ সীমিত এবং এক সময়ে আমরা চাষের জমি তো দূরের কথা বসবাসের ভূমিও পাব না। প্রতিদিন চাষের জমি কমছে এবং বসবাসের জমি থাকছে না এটি কে না জানে। জমির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে এবং দেশের বেশির ভাগ মানুষকে এখন বস্তিবাসী হতে হবে এর কোন অন্যথা নেই। ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি ব্যবহারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এরই মাঝে অবস্থা আরও জটিল হয়ে পড়েছে। সরকার নাগরিকদের আবাসনের জন্য কোন ধরনের দায়িত্ব বহন না করায় আবাসন একটি পুঁজিবাদী বিকারের বিষয় হয়ে গেছে। যার টাকা নাই, তার ভূমিও নাই-বাড়িও নাই। যার জমিতে শ্রম দেবার ক্ষমতা আছে তার জমি নেই, কিন্তু তার জমি আছে যার টাকা আছে। আবাসন ব্যবসা এমনটাই শক্তিশালী হয়েছে যে রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিকেরা সরকারের মন্ত্রীকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করে পার পেয়ে যেতে পারে। সরকারের জমিতে লোকেরা মাটি ভরাট করে বা দেয়াল তোলে। কিন্তু প্রশাসন কোন প্রশ্ন তুলতে পারে না। সাধারণ গরিব মানুষের জমি ভূমিদস্যুরা গিলে খায় সেখানে প্রশাসন বা বিচার বিভাগ কোন রক্ষাকবজ তৈরি করতে পারে না। এই অবস্থা দিনে দিনে আরও খারাপ হবে। ভূমিদস্যুতা অন্য যে কোন প্রকারের অন্যায়ের চাইতেও ভয়াবহ হয়ে ওঠবে। ভূমি নিয়ে টেঁটা-বল্লম আর লাঠির কাইজ্যা বন্দুকের লড়াইতে পরিণত হবে।
আমরা এর আগে জনকণ্ঠের একটি খবর দিয়ে এই তথ্যটি তুলে ধরেছি যে, প্রতি ঘণ্টায় আমাদের কৃষি জমি কমছে ১৮ একর। এভাবে চললে আগামী ৫০ বছরে এক ইঞ্চি জমিও থাকবে না চাষাবাদ করার জন্য। একই পত্রিকার খবরে আরও বলা হয় যে, ১৯৭৪ সালে মোট আবাদি জমি ছিল মোট জমির শতকরা ৫৯ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে সেটি কমে ৫৩ শতাংশে নেমে আসে। এখনকার হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর ১ লাখ ৬০ হাজার একর আবাদি জমি কমছে।
কিন্তু এত সব নির্মম সত্য আমাদের চোখের সামনে থাকার পরেও বর্তমানে নিয়ন্ত্রণহীন অপরিকল্পিকভাবে পুরো দেশের ভূমি ব্যবহার করা হচ্ছে। যার যেখানে যা খুশি তাই করছে। জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে, কেটে ফেলা হচ্ছে পাহাড়। ফলে পরিবেশে বিপর্যয় ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশের মানুষের বাসস্থান এবং ফসলি জমি-কোনটাই পাওয়া যাবে না। সেজন্য বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার পরিকল্পিত করার জন্য নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিটি নাগরিকের বাসস্থান এবং ফসলি জমি রক্ষা; দুটিই করতে হবে। রাষ্ট্র ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিককে ন্যূনতম মূল্যে তার পরিবারের জন্য ন্যূনতম বাসস্থান প্রদান করবে। যার বাসস্থান একসঙ্গে বা কিস্তিতে কেনার সামর্থ্য নেই রাষ্ট্র তাকে ন্যূনতম বাসস্থান প্রদান করবে। এই ন্যূনতম ব্যবস্থার বাইরে নাগরিকেরা নিজস্ব অর্থে বড় আকারের বা নির্ধারিত উন্নত স্থানে বাসস্থান কিনতে পারবে। দেশের সকল জমি বাসস্থান, ফসলি জমি, খাল-বিল, জলাশয়, শিল্পাঞ্চল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মসজিদ-মন্দির, ঈদগাঁ, পার্ক বা খেলার জায়গা ইত্যাদিতে চিহ্নিত থাকবে। বর্তমানের ছনের-টিনের-সেমিপাকা-পাকা ঘরবাড়ির বদলে হাইরাইজ সমবায়ভিত্তিক উঁচু দালান নির্মাণ করে বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এইসব বাসস্থানের জন্য পানি-পয়ঃনিষ্কাষণ, বিদ্যুত, বিনোদন, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি নিশ্চিত করা হবে। ফসলি জমির সর্বোচ্চ সিলিং হওয়া উচিত পাঁচ একর বা ৫০০ শতাংশ। ফসলি জমি কেবল কৃষকের কাছেই থাকা উচিত। বাসস্থানের জন্য রাজধানী শহরে ব্যক্তিগতভাবে ৩০ শতাংশের বেশি, জেলা শহরে ৫০ শতাংশের বেশি, উপজেলা বা থানা সদরে ১০০ শতাংশের বেশি জমির মালিক থাকা উচিত নয়। সকল খাসজমি কেবল ভূমিহীনদের প্রদান করা হবে। রাষ্ট্র উদ্বৃত্ত জমি বাজার দরে কিনে ভূমিহীনদের প্রদান করবে। ভূমিহীনরা এই জমি ব্যবহার করতে পারবে-কিন্তু কোনভাবেই বিক্রি করে স্বত্ব হস্তান্তর করতে পারবে না। স্বত্ব হস্তান্তর করতে হলে তাকে জমির মূল্য রাষ্ট্রকে পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় সরকারের বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে এবং সেই ভূমিটি সরকার পুনরায় কোন ভূমিহীনকে বরাদ্দ দিতে পারবে। ভূমি সংক্রান্ত এসব বিষয় একটি ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকতে হবে।
ভূমিরেকর্ড ব্যবস্থা জিআইএস প্রযুক্তিনির্ভর ডাটাবেজভিত্তিক হতে হবে। জমির নকশা থেকে শুরু করে দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমির ডিজিটাল নকশা থাকতে হবে। জমির বেচা-কেনা, উত্তরাধিকার, বণ্টন, দান ইত্যাদি এবং সব ধরনের হস্তান্তরের রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণভাবে কম্পিউটারে করতে হবে। জমিসংক্রান্ত সব তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষণ করতে হবে। সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে মাত্র পাঁচ বছরে এক হাজার কোটি টাকায় এই কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব। (ডিএলআর কর্তৃক আয়োজিত ২৮ জুন ২০০৮ তারিখের সভায় প্রদত্ত তথ্য) এতে আর যাই হোক, টিআইবির রিপোর্টে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিবাজ খাত হিসেবে এই খাতটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে না।
২০১১ সালের ২ জানুয়ারি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ভূমি ডিজিটাইজেশন করার বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয়। সেই সভায় পিপিপি নীতিমালার আলোকে মাত্র ১৮ মাসে ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কথা ছিল মার্চ মাসে সেই কাজটি শুরু হবে। এজন্য ইওআই-এর চূড়ান্ত রূপ আমরা ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই দেখতে পাব বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু ২০১২ সালের মে মাসে তেমন কোন তোড়জোড় আমি কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। আমি ধারণা করি, সেই ইওআই মারা গেছে।
২৮ মে’র সভায় জানা যায় যে, ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমির শ্রেণিবিন্যাস করছে। এরই মাঝে দেশের ২১টি জেলার ভূমির শ্রেণিবিন্যাস হয়ে গেছে এবং বাকি ৪০টি জেলার শ্রেণিবিন্যাস আগামী ২ বছরে সম্পন্ন হবে। এই শ্রেণিবিন্যাস ভূমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে।
সেই সভাতেই জানা যায়, বর্তমানে একটি নিবন্ধন দলিল সরবরাহ করতে ৩ বছর সময় লাগে। বালাম বইয়ের অভাবে সেই কাজটিও এখন বন্ধ। ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ না দিলে বালাম বই হবে না। সরকার সেই টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে না। তবে সরকার দলিল স্ক্যান করে বালাম বই বানানোর ও ৩ দিনে মূল দলিল ফেরত দেবার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির ইওআই সম্পন্ন হয়েছে এবং আরএফপি প্রদান করে এই বছরেই কাজটি শুরু করা যাবে বলে জানানো হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি জরিপের প্রচুর পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং এখনও করছে। এর একটি আরেকটির সঙ্গে সমন্বিত নয়। কোন কোনটি বিপরীতমুখী। এসব প্রকল্পের মাঝে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ৩টি উপজেলায় একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যেটির সঙ্গে ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থার সমিলতা আছে। ভূমি জরিপ অধিদফতর একটি ডিজিটাল মানচিত্রের কাজ করছে যেটি ডিজিটাল ভূমি জরিপে সহায়তা করতে পারে। সরকার বিদ্যমান রেকর্ড রক্ষা করার জন্য ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবে আমাদের কাছে থাকা এসব তথ্য যাই হোক না কেন, অর্থমন্ত্রী মহোদয় তার বাজেট বক্তৃতায় যা উল্লেখ করেছেন তাকে সঠিক বলে মনে করা যেতে পারে।
অর্থমন্ত্রী মহোদয় তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, (ক) ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড প্রণয়নসহ সংরক্ষণ প্রকল্পের অধীনে দেশের ৫৫টি জেলার খতিয়ানের ডাটা-এন্ট্রি হয়েছে। এক্ষেত্রে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) উরমরঃধষ খধহফ গধহধমবসবহঃ ঝুংঃবস (উখগঝ) প্রবর্তনের জন্য ৭টি জেলার ৪৫টি উপজেলা নির্দিষ্ট করেছে এবং এইসব উপজেলার ভূমি তথ্যসেবা কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করা হবে। এডিবির সহায়তাপ্রাপ্ত প্রকল্পের ধাঁচে সারাদেশেই এই প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
(খ) ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ডিজিটাল জরিপ প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে। ২১ জেলার ১৫২টি উপজেলায় সেই কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে ভূমির সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত ব্যবহারের জন্য ভূমি জোনিং কাজ এগিয়ে চলছে। আগামী দুই বছরে সারাদেশে ভূমি জোনিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
(গ) বিভিন্ন দলিলপত্র নিবন্ধন কার্যক্রম যা নিবন্ধন পরিদফতরের মহাপরিদর্শক নিয়ন্ত্রণ করেন, সেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রেকর্ড সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এই ব্যবস্থায় নিবন্ধনকারীরা নিবন্ধন করার সময়ই নিবন্ধিত দলিল পেতে পারেন।
(ঘ) এ ছাড়া সার্ভেয়ার জেনারেল অব বাংলাদেশ এবং স্পারসো’র সহায়তায় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর সারাদেশের জন্য ডিজিটাল ভূমি ম্যাপ সংগ্রহ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং জরিপ কাজের সঙ্গে এই ম্যাপের সমন্বয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। এই বিষয়ে বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কোরিয়া প্রজাতন্ত্র তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘২৩১। এইসব প্রস্তুতিমূলক কাজের পরিণতিতে এখন আমাদের লক্ষ্য সম্পূর্ণ ভূমি ব্যবস্থাপনা এক দফতর থেকে সম্পন্ন করা। এই ব্যবস্থার পথনকশা প্রণয়নের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই বিষয়ে ডিজিটাল জরিপ অধিদফতর, নিবন্ধন পরিদফতর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, স্পারসো এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় এই পথনকশাটি চূড়ান্ত করবেন এবং এর বাস্তবায়ন তাৎক্ষণিকভাবে শুরু করা হবে। এ জন্য পর্যাপ্ত বাস্তবায়িত হলে প্রতি জমির মালিককে একটি ভূমি মালিকানা সনদ (ঈখঙ) প্রদান করা সম্ভব হবে এবং সেই ঈখঙ’র ভিত্তিতে ভূমি অধিকারের বিতর্কিত বিষয়টির সমাধান হবে এবং একই দফরে জরিপ, নিবন্ধন, ভূমির মালিকানা এবং গুণগত শ্রেণী পরিবর্তনের বিষয়টি সুরাহা করা যাবে। ২৩২। ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (উরমরঃধষ খধহফ গধহধমবসবহঃ ঝুংঃবস, উখগঝ) প্রস্তুত করার এই কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সুবিধাভোগীগণ সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলাসমূহের আওতাধীন মৌজার যে কোন প্লটের সর্বশেষ হালনাগাদকৃত রেকর্ড ও নকশা সংক্রান্ত তথ্যাদি স্বল্পতম সময়ে জানতে পারবেন। এছাড়া নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে স্বল্পতম সময়ে সুবিধাভোগীগণ প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলার যে কোন প্লটের সর্বশেষ হালনাগাদকৃত রেকর্ড ও নকশা সংগ্রহ করতে পারবেন। সার্বিক নিয়ন্ত্রণ সরকারের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উক্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে পিপিসি (চঁনরষপ চৎরাধঃব চধৎঃহবৎংযরঢ়, চচচ) অনুসরণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ কম্পিউটারাইজেশনসহ ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ডিজিটালাইজেশনের পুরো উদ্যোগটি বাস্তবায়নে সময় সাশ্রয় করার লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব প্রদানের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে খতিয়ান ও ম্যাপ বিতরণের সেবাটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদানের সুযোগ রাখা হবে।
সামগ্রিকভাবে আলোচিত তথ্যসমূহের আলোকে আমি এই ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরব। আশা করি সামনের পর্বে এই লেখাটি শেষ হবে।
ঢাকা, ২১ জুন ২০১২ ॥ লেখক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান-সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর প্রণেতা ॥ ই-মেইল : mustafajabbar@gmail.com, ওয়েবপেজ: www.bijoyekushe.net
॥ চার ॥
এই কথাটি বাংলাদেশের কোন মানুষকে বলে দিতে হবে না যে, আমাদের ভূমির পরিমাণ সীমিত এবং এক সময়ে আমরা চাষের জমি তো দূরের কথা বসবাসের ভূমিও পাব না। প্রতিদিন চাষের জমি কমছে এবং বসবাসের জমি থাকছে না এটি কে না জানে। জমির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে এবং দেশের বেশির ভাগ মানুষকে এখন বস্তিবাসী হতে হবে এর কোন অন্যথা নেই। ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি ব্যবহারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এরই মাঝে অবস্থা আরও জটিল হয়ে পড়েছে। সরকার নাগরিকদের আবাসনের জন্য কোন ধরনের দায়িত্ব বহন না করায় আবাসন একটি পুঁজিবাদী বিকারের বিষয় হয়ে গেছে। যার টাকা নাই, তার ভূমিও নাই-বাড়িও নাই। যার জমিতে শ্রম দেবার ক্ষমতা আছে তার জমি নেই, কিন্তু তার জমি আছে যার টাকা আছে। আবাসন ব্যবসা এমনটাই শক্তিশালী হয়েছে যে রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিকেরা সরকারের মন্ত্রীকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করে পার পেয়ে যেতে পারে। সরকারের জমিতে লোকেরা মাটি ভরাট করে বা দেয়াল তোলে। কিন্তু প্রশাসন কোন প্রশ্ন তুলতে পারে না। সাধারণ গরিব মানুষের জমি ভূমিদস্যুরা গিলে খায় সেখানে প্রশাসন বা বিচার বিভাগ কোন রক্ষাকবজ তৈরি করতে পারে না। এই অবস্থা দিনে দিনে আরও খারাপ হবে। ভূমিদস্যুতা অন্য যে কোন প্রকারের অন্যায়ের চাইতেও ভয়াবহ হয়ে ওঠবে। ভূমি নিয়ে টেঁটা-বল্লম আর লাঠির কাইজ্যা বন্দুকের লড়াইতে পরিণত হবে।
আমরা এর আগে জনকণ্ঠের একটি খবর দিয়ে এই তথ্যটি তুলে ধরেছি যে, প্রতি ঘণ্টায় আমাদের কৃষি জমি কমছে ১৮ একর। এভাবে চললে আগামী ৫০ বছরে এক ইঞ্চি জমিও থাকবে না চাষাবাদ করার জন্য। একই পত্রিকার খবরে আরও বলা হয় যে, ১৯৭৪ সালে মোট আবাদি জমি ছিল মোট জমির শতকরা ৫৯ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে সেটি কমে ৫৩ শতাংশে নেমে আসে। এখনকার হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর ১ লাখ ৬০ হাজার একর আবাদি জমি কমছে।
কিন্তু এত সব নির্মম সত্য আমাদের চোখের সামনে থাকার পরেও বর্তমানে নিয়ন্ত্রণহীন অপরিকল্পিকভাবে পুরো দেশের ভূমি ব্যবহার করা হচ্ছে। যার যেখানে যা খুশি তাই করছে। জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে, কেটে ফেলা হচ্ছে পাহাড়। ফলে পরিবেশে বিপর্যয় ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশের মানুষের বাসস্থান এবং ফসলি জমি-কোনটাই পাওয়া যাবে না। সেজন্য বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার পরিকল্পিত করার জন্য নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিটি নাগরিকের বাসস্থান এবং ফসলি জমি রক্ষা; দুটিই করতে হবে। রাষ্ট্র ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিককে ন্যূনতম মূল্যে তার পরিবারের জন্য ন্যূনতম বাসস্থান প্রদান করবে। যার বাসস্থান একসঙ্গে বা কিস্তিতে কেনার সামর্থ্য নেই রাষ্ট্র তাকে ন্যূনতম বাসস্থান প্রদান করবে। এই ন্যূনতম ব্যবস্থার বাইরে নাগরিকেরা নিজস্ব অর্থে বড় আকারের বা নির্ধারিত উন্নত স্থানে বাসস্থান কিনতে পারবে। দেশের সকল জমি বাসস্থান, ফসলি জমি, খাল-বিল, জলাশয়, শিল্পাঞ্চল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মসজিদ-মন্দির, ঈদগাঁ, পার্ক বা খেলার জায়গা ইত্যাদিতে চিহ্নিত থাকবে। বর্তমানের ছনের-টিনের-সেমিপাকা-পাকা ঘরবাড়ির বদলে হাইরাইজ সমবায়ভিত্তিক উঁচু দালান নির্মাণ করে বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এইসব বাসস্থানের জন্য পানি-পয়ঃনিষ্কাষণ, বিদ্যুত, বিনোদন, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি নিশ্চিত করা হবে। ফসলি জমির সর্বোচ্চ সিলিং হওয়া উচিত পাঁচ একর বা ৫০০ শতাংশ। ফসলি জমি কেবল কৃষকের কাছেই থাকা উচিত। বাসস্থানের জন্য রাজধানী শহরে ব্যক্তিগতভাবে ৩০ শতাংশের বেশি, জেলা শহরে ৫০ শতাংশের বেশি, উপজেলা বা থানা সদরে ১০০ শতাংশের বেশি জমির মালিক থাকা উচিত নয়। সকল খাসজমি কেবল ভূমিহীনদের প্রদান করা হবে। রাষ্ট্র উদ্বৃত্ত জমি বাজার দরে কিনে ভূমিহীনদের প্রদান করবে। ভূমিহীনরা এই জমি ব্যবহার করতে পারবে-কিন্তু কোনভাবেই বিক্রি করে স্বত্ব হস্তান্তর করতে পারবে না। স্বত্ব হস্তান্তর করতে হলে তাকে জমির মূল্য রাষ্ট্রকে পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় সরকারের বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে এবং সেই ভূমিটি সরকার পুনরায় কোন ভূমিহীনকে বরাদ্দ দিতে পারবে। ভূমি সংক্রান্ত এসব বিষয় একটি ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকতে হবে।
ভূমিরেকর্ড ব্যবস্থা জিআইএস প্রযুক্তিনির্ভর ডাটাবেজভিত্তিক হতে হবে। জমির নকশা থেকে শুরু করে দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমির ডিজিটাল নকশা থাকতে হবে। জমির বেচা-কেনা, উত্তরাধিকার, বণ্টন, দান ইত্যাদি এবং সব ধরনের হস্তান্তরের রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণভাবে কম্পিউটারে করতে হবে। জমিসংক্রান্ত সব তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষণ করতে হবে। সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে মাত্র পাঁচ বছরে এক হাজার কোটি টাকায় এই কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব। (ডিএলআর কর্তৃক আয়োজিত ২৮ জুন ২০০৮ তারিখের সভায় প্রদত্ত তথ্য) এতে আর যাই হোক, টিআইবির রিপোর্টে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিবাজ খাত হিসেবে এই খাতটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে না।
২০১১ সালের ২ জানুয়ারি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ভূমি ডিজিটাইজেশন করার বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয়। সেই সভায় পিপিপি নীতিমালার আলোকে মাত্র ১৮ মাসে ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কথা ছিল মার্চ মাসে সেই কাজটি শুরু হবে। এজন্য ইওআই-এর চূড়ান্ত রূপ আমরা ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই দেখতে পাব বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু ২০১২ সালের মে মাসে তেমন কোন তোড়জোড় আমি কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। আমি ধারণা করি, সেই ইওআই মারা গেছে।
২৮ মে’র সভায় জানা যায় যে, ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমির শ্রেণিবিন্যাস করছে। এরই মাঝে দেশের ২১টি জেলার ভূমির শ্রেণিবিন্যাস হয়ে গেছে এবং বাকি ৪০টি জেলার শ্রেণিবিন্যাস আগামী ২ বছরে সম্পন্ন হবে। এই শ্রেণিবিন্যাস ভূমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে।
সেই সভাতেই জানা যায়, বর্তমানে একটি নিবন্ধন দলিল সরবরাহ করতে ৩ বছর সময় লাগে। বালাম বইয়ের অভাবে সেই কাজটিও এখন বন্ধ। ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ না দিলে বালাম বই হবে না। সরকার সেই টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে না। তবে সরকার দলিল স্ক্যান করে বালাম বই বানানোর ও ৩ দিনে মূল দলিল ফেরত দেবার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির ইওআই সম্পন্ন হয়েছে এবং আরএফপি প্রদান করে এই বছরেই কাজটি শুরু করা যাবে বলে জানানো হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি জরিপের প্রচুর পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং এখনও করছে। এর একটি আরেকটির সঙ্গে সমন্বিত নয়। কোন কোনটি বিপরীতমুখী। এসব প্রকল্পের মাঝে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ৩টি উপজেলায় একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যেটির সঙ্গে ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থার সমিলতা আছে। ভূমি জরিপ অধিদফতর একটি ডিজিটাল মানচিত্রের কাজ করছে যেটি ডিজিটাল ভূমি জরিপে সহায়তা করতে পারে। সরকার বিদ্যমান রেকর্ড রক্ষা করার জন্য ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবে আমাদের কাছে থাকা এসব তথ্য যাই হোক না কেন, অর্থমন্ত্রী মহোদয় তার বাজেট বক্তৃতায় যা উল্লেখ করেছেন তাকে সঠিক বলে মনে করা যেতে পারে।
অর্থমন্ত্রী মহোদয় তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, (ক) ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড প্রণয়নসহ সংরক্ষণ প্রকল্পের অধীনে দেশের ৫৫টি জেলার খতিয়ানের ডাটা-এন্ট্রি হয়েছে। এক্ষেত্রে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) উরমরঃধষ খধহফ গধহধমবসবহঃ ঝুংঃবস (উখগঝ) প্রবর্তনের জন্য ৭টি জেলার ৪৫টি উপজেলা নির্দিষ্ট করেছে এবং এইসব উপজেলার ভূমি তথ্যসেবা কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করা হবে। এডিবির সহায়তাপ্রাপ্ত প্রকল্পের ধাঁচে সারাদেশেই এই প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
(খ) ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ডিজিটাল জরিপ প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে। ২১ জেলার ১৫২টি উপজেলায় সেই কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে ভূমির সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত ব্যবহারের জন্য ভূমি জোনিং কাজ এগিয়ে চলছে। আগামী দুই বছরে সারাদেশে ভূমি জোনিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
(গ) বিভিন্ন দলিলপত্র নিবন্ধন কার্যক্রম যা নিবন্ধন পরিদফতরের মহাপরিদর্শক নিয়ন্ত্রণ করেন, সেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রেকর্ড সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এই ব্যবস্থায় নিবন্ধনকারীরা নিবন্ধন করার সময়ই নিবন্ধিত দলিল পেতে পারেন।
(ঘ) এ ছাড়া সার্ভেয়ার জেনারেল অব বাংলাদেশ এবং স্পারসো’র সহায়তায় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর সারাদেশের জন্য ডিজিটাল ভূমি ম্যাপ সংগ্রহ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং জরিপ কাজের সঙ্গে এই ম্যাপের সমন্বয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। এই বিষয়ে বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কোরিয়া প্রজাতন্ত্র তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘২৩১। এইসব প্রস্তুতিমূলক কাজের পরিণতিতে এখন আমাদের লক্ষ্য সম্পূর্ণ ভূমি ব্যবস্থাপনা এক দফতর থেকে সম্পন্ন করা। এই ব্যবস্থার পথনকশা প্রণয়নের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই বিষয়ে ডিজিটাল জরিপ অধিদফতর, নিবন্ধন পরিদফতর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, স্পারসো এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় এই পথনকশাটি চূড়ান্ত করবেন এবং এর বাস্তবায়ন তাৎক্ষণিকভাবে শুরু করা হবে। এ জন্য পর্যাপ্ত বাস্তবায়িত হলে প্রতি জমির মালিককে একটি ভূমি মালিকানা সনদ (ঈখঙ) প্রদান করা সম্ভব হবে এবং সেই ঈখঙ’র ভিত্তিতে ভূমি অধিকারের বিতর্কিত বিষয়টির সমাধান হবে এবং একই দফরে জরিপ, নিবন্ধন, ভূমির মালিকানা এবং গুণগত শ্রেণী পরিবর্তনের বিষয়টি সুরাহা করা যাবে। ২৩২। ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (উরমরঃধষ খধহফ গধহধমবসবহঃ ঝুংঃবস, উখগঝ) প্রস্তুত করার এই কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সুবিধাভোগীগণ সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলাসমূহের আওতাধীন মৌজার যে কোন প্লটের সর্বশেষ হালনাগাদকৃত রেকর্ড ও নকশা সংক্রান্ত তথ্যাদি স্বল্পতম সময়ে জানতে পারবেন। এছাড়া নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে স্বল্পতম সময়ে সুবিধাভোগীগণ প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলার যে কোন প্লটের সর্বশেষ হালনাগাদকৃত রেকর্ড ও নকশা সংগ্রহ করতে পারবেন। সার্বিক নিয়ন্ত্রণ সরকারের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উক্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে পিপিসি (চঁনরষপ চৎরাধঃব চধৎঃহবৎংযরঢ়, চচচ) অনুসরণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ কম্পিউটারাইজেশনসহ ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ডিজিটালাইজেশনের পুরো উদ্যোগটি বাস্তবায়নে সময় সাশ্রয় করার লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব প্রদানের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে খতিয়ান ও ম্যাপ বিতরণের সেবাটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদানের সুযোগ রাখা হবে।
সামগ্রিকভাবে আলোচিত তথ্যসমূহের আলোকে আমি এই ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরব। আশা করি সামনের পর্বে এই লেখাটি শেষ হবে।
ঢাকা, ২১ জুন ২০১২ ॥ লেখক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান-সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর প্রণেতা ॥ ই-মেইল : mustafajabbar@gmail.com, ওয়েবপেজ: www.bijoyekushe.net
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন