পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২৬ মে, ২০১২

একুশ শতক:ইন্টারনেট ও বাংলা ভাষা

জাতি হিসেবে আমরা যে মাতৃভাষার অনুরক্ত সেটি নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। দুনিয়াজোড়া প্রযুক্তির সহায়তার জন্য রোমান হরফে মাতৃভাষা লেখা এবং ধর্মের নামে আরবী হরফে মাতৃভাষা লেখা এসব প্রবল হুজুগের মাঝেও আমরা কেবল ভাষা আন্দোলন করিনি, বরং এখনও বাংলা আমাদের সকলের প্রিয় ভাষা। যেখানেই সুযোগ পাই সেখানেই আমরা এই ভাষাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করি। সেদিন ইন্টারনেটে এক তরুণীর একটি প্রতিক্রিয়ায় সেটি খুব সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ফেসবুক ব্যবহার করছেন। ওখানে স্ট্যাটাস লিখছেন বাংলা ভাষায়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা হরফে লিখতে পারছিলেন না বলে তিনি রোমান হরফে বাংলা লিখছিলেন। ইদানীং এমনটি হয়েই থাকে। অনেকেই জানেন না যে, কম্পিউটারের বাংলা সফটওয়্যারটিতেই ইন্টারনেটে বাংলা লেখার সুযোগ রয়েছে। এজন্য একটি বাড়তি কমান্ড ব্যবহার করতে হয়। তবে আমি যখন মোবাইলে কোন এসএমএস পাঠাই তখন তো আমার আর কোন বিকল্প থাকে না। আমাকে রোমান হরফেই বাংলা লিখতে হয়। মোবাইলে বাংলা এসএমএস তৈরি করাটা একটি কঠিনতম কাজ। বিশেষ করে মাত্র ১২টি বোতাম দিয়ে বাংলা লেখা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। শুধু তাই নয়, প্রায় সকল মোবাইলেই বাংলা সমর্থন পাওয়া যায় না বা বাংলা লেখার সুযোগ নেই। 
আমি অবশ্য কম্পিউটারে বাংলা লিখি। আমার মতো অনেকেই যারা জানেন যে, কম্পিউটার দিয়ে ইন্টারনেটে বাংলা লেখা যায় তারা সকল পর্যায়েই বাংলা লেখেন। বস্তুত যাদের কাছে কোন বাংলা সফটওয়্যার নেই তারা ঠিকানা থেকে বিজয় ইন্টারনেট নামক একটি সফটওয়্যার বিনামূল্যে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। সেটি ইন্সটল করে নিয়ে পঃৎষ+ধষঃ+া টাইপ করে বাংলা এবং একইভাবে পঃৎষ+ধষঃ+া টাইপ করে ইংরেজী লিখতে পারেন। এজন্য কোন ফন্ট বাছাই করার দরকার নেই। আবার যাদের বিজয় বায়ান্ন, বিজয় একুশে বা বিজয় একাত্তর আছে তাদের এই সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করারও দরকার নেই। সেই সফটওয়্যার দিয়েই পঃৎষ+ধষঃ+া টাইপ করে বাংলা এবং একইভাবে পঃৎষ+ধষঃ+া টাইপ করে ইংরেজী লিখতে পারেন। কিন্তু মোবাইলে সেই সহজ সুযোগটি নেই।
আমি কম্পিউটারে বাংলা লিখতে পারি কারণ কম্পিউটারে ইন্টারনেটে বাংলা লেখার সফটওয়্যার আমার আছে। যে তরুণীটির কথা বলছি তার কম্পিউটারে বাংলা সফটওয়্যার থাকলেও তিনি জানতেন না যে, সেটি দিয়েই ইন্টারনেটে তিনি বাংলা লিখতে পারেন। সেজন্য তিনিও রোমান হরফ দিয়ে বাংলা লিখে আসছিলেন। আকস্মিকভাবে তিনি জেনে গেলেন যে, কম্পিউটারে যদি তিনি কন্ট্রোল অলটার বি এর বদলে ভি টাইপ করেন তাহলেই ইন্টারনেটে বাংলা লেখা যায়। তিনি সেটি চেষ্টা করে সফল হলেন। এরপর তিনি কর্ণধার বানানটি লিখতে পারছিলেন না। তখন তাকে জানানো হলো যে, এজন্য প্রথমে র, এরপর জি ও তারপর রেফ যেখানে হবে সেই বর্ণটি লিখতে হবে। তিনি সেটি সফলতার সঙ্গে প্রয়োগও করলেন। এরপর তার ফেসবুকের পেজের মন্তব্য হচ্ছে, “এই আনন্দ আমি ধরে রাখতে পারছি না। ইন্টারনেটে আমি বাংলা লিখতে পারছি সে যে কি আনন্দ! আমি এখন যাকেই পাচ্ছি তাকেই কেবল ইন্টারনেটে কেমন করে বাংলা লিখতে হয় তাই শেখাচ্ছি এবং যাকে শেখাচ্ছি সেও দেখছি চরম আগ্রহের সঙ্গে সেটি শিখছে।” বস্তুত এটিই হলো আমরা বাংলাদেশের ভাষাপ্রিয় মানুষের অনুভূতি।
বিগত তিন বছরে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহাকারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যেখানে ২০০৮ সালে জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ৩ ভাগ মানুষ ইন্টারনেটে যুক্ত ছিল ২০১২ সালের মে মাসে সেই সংখ্যা শতকরা ১৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে। অঙ্কের হিসাবে সেটি তিন কোটির ওপরে। একই সময়ে মোবাইলের ব্যবহারকারী জনসংখ্যার শতকরা ২৫ থেকে ৫৩ ভাগে উন্নীত হয়েছে। সেটি প্রায় ৯ কোটি। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের প্রতিনিধিকে এসব তথ্য দিয়েছে আমাদের টিএ্যান্ডটি মন্ত্রণালয়। এই দুটি উপাত্তের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগটি হলো যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সংখ্যা বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে মোবাইল সংযোগের। জনসংখ্যার শতকরা ১৮ ভাগ যে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তার শতকরা ৯০ ভাগই মোবাইলের সহায়তায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে। 
বাংলা ভাষী এমন বিপুল সংখ্যক মানুষ যখন কোন কাজে যুক্ত হয় তখন খুব সঙ্গতকারণেই তার প্রধান বিষয় হয় মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহার করা। কেউ যদি একটু ভাল করে পর্যবেক্ষণ করেন তবে দেখবেন বাংলাদেশের বাঙালীরা দেশের ভেতরে বা বাইরে নিজের ভাষা ব্যবহার করতে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে। এজন্য তারা মোবাইলে বা ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে বাংলা ভাষা ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু প্রযুক্তিগত সঙ্কটের কারণে বিশেষ করে মোবাইল ফোনে বাংলা ব্যবহার পদ্ধতিগত জটিলতার মাঝে আবদ্ধ হয়ে আছে। প্রায় সকল ক্ষেত্রেই মোবাইল থেকে রোমান হরফে বাংলা লিখতে হয়। আগের চাইতে অবস্থার উন্নতি হবার পরও বিশেষ করে স্মার্ট ফোনে বাংলার ব্যবহার এখনও সহজ নয়। এমনকি স্মার্ট ফোনের অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে বাংলাকে সাবলীলভাবে ব্যবহার করা যায় না যেমনটি কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমে করা যায়।
তবে সম্প্রতি মোবাইলে বাংলা ব্যবহারের একটি মাইলফলক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে সরকারী পথে কেউ বাংলা কীপ্যাড মুদ্রণ ব্যতীত কোন সাধারণ মোবাইল সেট আমদানি করতে পারে না। এটি বাংলা রাষ্ট্রভাষা এমন রাষ্ট্রের জন্য একটি যথার্থ সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের মাঝে কেবল একটি ফাঁক রয়ে গেছে। সেটি হলো, মোবাইল কীপ্যাড বাংলায় হলেও স্মার্টফোনে কোন কীবোর্ড প্রমিত না করায় সেখানে বাংলার ব্যবহার স্থবির হয়ে আছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মানুষেরা বাংলা কীবোর্ড প্রমিত করেননি। এক সময়ে তারা আমার বিজয় কীবোর্ড নকল করে তথাকথিত বাংলা কীবোর্ড প্রমিত করেছিল। পরে নকলের দায় এড়াতে বলছে যে, কম্পিউটারের কীবোর্ড প্রমিত করার প্রয়োজন নেই। তারা এটি ভাবেনি যে, কম্পিউটারের যে কোয়ার্টি কীবোর্ড আছে সেটির প্রয়োগক্ষেত্র কেবল প্রচলিত কম্পিউটারই নয়, মোবাইল ফোন যার টাচ প্যাড বা কোয়ার্টি কীবোর্ড আছে তাতে কম্পিউটারের কীবোর্ড ব্যবহার করা যায়। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাপোর্ট টু ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের মতের অমিল আছে। তারা ইউএনডিপির কুমন্ত্রণায় একটি বেসরকারী বাংলা সফটওয়্যারের প্রকাশ্য সমর্থন দিচ্ছে। শুনেছি তারা নাকি এটিকে তথাকথিত ইউনিকোড কম্পাটবিলিটির কথা বলে প্রচলন করার চেষ্টা করছে। সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এক সময়ে একটি সার্কুলার জারি করেছিল। পরে সেটি প্রত্যাহার করেছে। তবে জটিলতা যা থাকার তাতো থেকেই গেছে বরং দিনে দিনে সেটি আরও বেড়েছে। এখন স্কুলের শিক্ষকদেরকে এমনসব বাংলা কীবোর্ড শেখানো হচ্ছে যার সঙ্গে সরকারের আইনগত কোন সম্পর্ক নেই। বরাবরের মতো সরকারই হয়ে দাঁড়িয়েছে কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনে বাংলা ব্যবহারের বিভ্রান্তি সৃষ্টির সবচেয়ে বড় কারিগর। সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই তার নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আমরা খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি যে, মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে খুব সহজে বাংলা ব্যবহার করা বেশ কঠিন। মোবাইলে বাংলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এরই মাঝে আমরা করেছি। মোবাইলের কীপ্যাডের পাশাপাশি আমরা বাংলার প্রমিত এনকোডিং যেটি ইউনিকোডের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেটি নির্ধারিত হয়ে গেছে। এই মানটি নির্ধারণের ফলে কম্পিউটারে বাংলার মান নির্ধারণ নিশ্চিত হয়েছে। এখন যদি মোবাইল ফোনেও একই মান প্রয়োগ করা হয় তবে সকল ডিজিটাল ডিভাইসে বাংলার আদান-প্রদান জটিলতাহীন হতে পারে।
সাম্প্রতিককালে সরকার তার সকল বাংলা তথ্য ইউনিকোড এনকোডিং-এ সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। এতে কোন কোন ফন্ট সরকারের প্রমিতকরণকে অনুসরণ করে সেটিও বলা হয়েছে। অবশ্য সরকারী প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত ফন্টগুলোর মাঝে কেবল সুতন্বীওএমজে-ই বাংলাদেশের প্রমিতকরণ মান বিডিএস ১৫২০:২০১১ অনুযায়ী তৈরি করা। বাকি ফন্টগুলো ইউনিকোড সমর্থন করলেও সেইসব ফন্ট বিডিএস ১৫২০:২০১১ সমর্থন করে না। বস্তুত ইউনিকোড ৬.০ এবং বিডিএস ১৫২০:২০১১ এর মাঝে ছোট দুটি পার্থক্য রয়েছে। ইউনিকোড ৬.০ অনুসারে দাঁড়ি এবং ডবল দাঁড়ি হিন্দী এনকোডিং থেকে নিতে হয়। বৃন্দা, সোলায়মান লিপি, নিকস, মুক্ত ইত্যাদি ফন্টে সেই ইউনিকোড ৬.০ মান বহাল রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের এনেকোডিং মানে দাঁড়ি ও ডবল দাঁড়ির জন্য দুটি বাংলা মান রাখা হয়নি। ফলে এসব ফন্ট ইউনিকোড ৬.০ সমর্থন করলেও বিডিএস ১৫২০:২০১১ সমর্থন করেনা।
যাহোক এখন দুটি চ্যালেঞ্জ খুব দ্রুত মোকাবেলা করার প্রয়োজন। প্রথমত ইংরেজি কোয়ার্টি কীবোর্ড যেখানে প্রয়োগ করা হয় সেখানে বাংলার প্রমিত মান কোনটি হবে সেই সম্পর্কে খুব স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি। শুধু মোবাইলের কীপ্যাড প্রমিত করার ফলেই কীবোর্ডের জটিলতা শেষ হয়ে যায়নি। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বিএসটিআই যদি এই কাজটি সম্পন্ন না করে তবে এর জটিলতা জাতিকে বহন করতেই হবে।
অন্যদিকে এটি খুবই জরুরী যে, স্মার্ট ফোনের অপারেটিং সিস্টেম যেমন এন্ড্রয়েড, সিমবিয়ান, উইন্ডোজ মোবাইল, আইও. এস ইত্যাদিতে সিস্টেম লেভেলে বাংলা লেখার সেই ব্যবস্থা করা যেটি এখন আমরা কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম যেমন উইন্ডোজ, ম্যাক ও লিনাক্সে করেছি। সরকারের যেসব সংস্থা খুব দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারঙ্গম তাদেরই উচিত প্রথমে এই কাজগুলো করা এবং তারপর জনগণ কিভাবে বাংলা লিখবে তার পরামর্শ প্রদান করা। সেই কাজটি না করে তারা যদি কোন না কোন বিশেষ সফটওয়্যারকে সার্টিফিকেট দিতে শুরু করে এবং সেই অনুসারেই পৃষ্ঠপোষকতাও করতে থাকে তবে পুরো বিষয়টি আরও জটিলই হবে।
ভাষার জন্য যে জাতি রক্ত দিয়েছে সেই জাতি কোনমতেই সরকারের কোন না কোন অংশের দায়িত্বহীনতা এবং অতি সক্রিয়তার জন্য ডিজিটাল যুগে তার ডিজিটাল ডিভাইসে মাতৃভাষা ব্যবহারে জটিলতায় ভুগতে পারে না। আমরা যখন ইন্টারনেট সভ্যতায় আছি তখন সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে সেই অনুপাতেই তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি সবিনয়ে বলতে পারি যে, সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখন সুখনিদ্রায় ব্যস্ত। এর সাথে যুক্ত সরকারের কপিরাইট অফিস সম্পূর্ণ নীরব। অন্যদিকে সরকারের এটুআই প্রকল্প অতি সংবেদনশীলতা দেখিয়ে পরিস্থিতির সমাধান না করে জটিলতাই বাড়াচ্ছে। অনুগ্রহ করে সকলে এক টেবিলে বসে একটি স্থায়ী সমাধান তৈরি করুন এবং আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য তার মাতৃভাষার প্রতি দরদ প্রকাশের পথটাকে কুসুমাস্তীর্ণ করুন।

ঢাকা, ২৬ মে ২০১২ ॥ লেখক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা ও কর্মসূচির প্রণেতা ॥ ই-মেইল : mustafajabbar@gmail.com, ওয়েবপেজ: www.bijoyekushe.net

শনিবার, ১৯ মে, ২০১২

ডজিটিাল বাংলাদশে ॥ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি




মোস্তাফা জব্বার
॥ পাঁচ ॥
ঈ. ডজিটিাল শক্ষিা : র্বতমান সরকার শক্ষিাক্ষত্রেে অভাবনীয় সফলতা র্অজন করছে;ে সইে বষিয়ে এমনকি সরকাররে নন্দিুকরোও প্রশ্ন তোলনে না। এই প্রথম দশেরে একটি শক্ষিানীতি নয়িে তমেন কোন বর্তিক হয়নি এবং সকল স্তররে মানুষরে কাছে সটেি গৃহীত হয়ছে।ে প্রাথমকি ও নম্নি মাধ্যমকি স্তররে পাবলকি পরীক্ষার প্রচলন করা ছাড়াও বনিামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদানরে সরকারী সদ্ধিান্ত পুরো দশেরে মানুষরে প্রশংসা পয়েছে।ে একই সাথে একটি ডজিটিাল শক্ষিাব্যবস্থা প্রচলনে সরকাররে আন্তরকিতা সকল মহলে প্রশংসতি হয়ছে।ে সরকার তথ্যপ্রযুক্তি শক্ষিা ও শক্ষিায় তথ্যপ্রযুক্তরি ব্যবহার বষিয়ে একটি নীতমিালা ও র্কমপরকিল্পনা প্রণয়ন করছেে এবং তার বাস্তবায়নরে জন্য ব্যাপক র্কমকা- গ্রহণ করছে।ে
সরকাররে হাতে শক্ষিার ডজিটিাল যাত্রার সবচয়েে বড় যে প্রকল্পটি এখন রয়ছেে সটেি হলো ২০ হাজার ৫০০ শক্ষিা প্রতষ্ঠিানে ল্যাপটপ ও প্রজক্টের প্রদান করে র্স্মাট ক্লাসরুম গড়ে তোলা। ৩ হাজার ৫৬ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি এখন বাস্তবায়নাধীন রয়ছে।ে এরই মাঝে সরকার এই ধারণার প্রাথমকি প্রয়োগরে কাজটি শুরু করছে।ে দশেরে র্সবত্র শক্ষিক প্রশক্ষিণ কন্দ্রেগুলোতে ইন্টারএ্যাকটভি ও ডজিটিাল শক্ষিা কনটন্টেস তরৈরি প্রশক্ষিণ দয়ো হচ্ছ।ে শক্ষিকরা ডজিটিাল কনটন্টেস তরৈি করছনে এবং সইেসব তথ্যবলী সকলরে জন্য উন্মুক্ত করা হয়ছে।ে বশে কছিু শক্ষিা প্রতষ্ঠিানে ডজিটিাল শক্ষিার বাস্তব প্রয়োগ করা হয়ছে।ে অনকে শক্ষিা প্রতষ্ঠিানে ডজিটিাল ক্লাসরুম চালু হয়ছেে এবং র্পযায়ক্রমে সকল শক্ষিা প্রতষ্ঠিানরে সকল ক্লাসরুম ডজিটিাল করার পরকিল্পনা গ্রহণ করা হয়ছে।ে বজিয় ডজিটিাল নামক একটি প্রতষ্ঠিান প্রি স্কুল র্পযায়রে পাঠ্য বষিয়কে ডজিটিাল কনটন্টেে রূপান্তর করছে।ে র্পাবত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন র্বোড প্রাথমকি র্পযায়রে পাঠ্য বষিয়কে সফটওয়্যারে রূপান্তর করছে।ে ২০১৩ সালে পাঠক্রম পরর্বিতন সমাপ্ত হলে প্রাথমকি ও মাধ্যমকিসহ সকল স্তররে পাঠ্যপুস্তককে ডজিটিাল রূপান্তর করা হবে বলে আশা করা যায়। এরই মাঝে সরকার ৩ হাজাররেও বশেি শক্ষিা প্রতষ্ঠিানে কম্পউিটার ল্যাব গড়ে তুলছে।ে বগিত তনি বছর যাবতই এই প্রচষ্টো অব্যাহত রয়ছে।ে আগামীতওে এই র্কাযক্রম অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়। সরকার ২০১২ সাল থকেে ষষ্ঠ শ্রণেীতে কম্পউিটার শক্ষিা বাধ্যতামূলক করছে।ে ২০১৩ সালে ৭ম-৮ম ও ৯ম শ্রণেীতে বষিয়টি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছ।ে ঢাকার কাছে গাজীপুরে ডজিটিাল বশ্বিবদ্যিালয় স্থাপনরে উদ্যোগ নয়ো হয়ছে।ে শাহজালাল, ঢাকা বশ্বিবদ্যিালয়রে টএিসস,ি জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বশ্বিবদ্যিালয়ে সীমতি র্পযায়রে ওয়াইম্যাক্স চালু করা হয়ছে।ে ২০১১ সাল থকেইে এনসটিবিরি সকল পাঠ্যপুস্তক ইন্টারনটেে পাওয়া যাচ্ছ।ে বভিন্নি শক্ষিা প্রতষ্ঠিান ও সরকারী-বসেরকারী গ্রন্থাগাররে ব্যবস্থাপনা ডজিটিাল করার পাশাপাশি ডজিটিাল লাইব্ররেি ও ই-তথ্যভা-ার গড়ে তোলা হচ্ছে যা শক্ষর্িাথীদরে জ্ঞান র্অজনরে সহায়ক হয়ছে।ে
উ. সচতেনতা বৃদ্ধি : এ বষিয়ে সকলইে একমত য,ে ডজিটিাল বাংলাদশে ঘোষণাটি নজিইে একটি বড় ধরনরে র্অজন ও বরিাট রকমরে সচতেনতা র্কমসূচী। আমরা মনে কর,ি ডজিটিাল বাংলাদশে ঘোষণাটইি হচ্ছে একটি বড় র্অজন। এর ফলে দশে-বদিশেে বাংলাদশে তার ভাবর্মূতকিে উজ্জ্বল করছে।ে আমরা লক্ষ্য করছে,ি এই সময়ে ডজিটিাল বাংলাদশে বষিয়ে ব্যাপক সচতেনতামূলক কাজ হয়ছে।ে বাংলাদশে কম্পউিটার সমতি,ি বসেসি ও অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি সরকার ডজিটিাল উদ্ভাবনী মলোকে জলো র্পযায় র্পযন্ত ছড়য়িে দয়িছে।ে এই সময়রে একটি বড় ঘটনা ছলি ২০০৯ সালে বাংলাদশে কম্পউিটার সমতিি র্কতৃক ডজিটিাল বাংলাদশে সামটিরে আয়োজন করা এবং ২০১১ সালে ই-এশয়িার মতো বশিাল একটি সম্মলেনরে আয়োজন করা। ডজিটিাল বাংলাদশে ঘোষণার জন্য এসোসওি নামক একটি প্রতষ্ঠিান প্রধানমন্ত্রীকে বশিষে পুরস্কারও প্রদান কর।ে
গ. ডজিটিাল জীবনধারার সূচনা : বাংলাদশেরে মানুষ এরই মাঝে একটি ডজিটিাল যুগরে বাসন্দিা হবার স্বাদ নতিে শুরু করছে।ে ডজিটিাল জীবনধারা হচ্ছে একটি জাত-িগোষ্ঠীর র্সাবকি জীবনধারাকে ডজিটিাল রূপান্তররে মাঝে নয়িে যাওয়া। ডজিটিাল বাংলাদশেরে কথা বলার মানইে হচ্ছে সইে জীবনধারা গড়ে তোলা। আমরা লক্ষ্য করছেি য,ে আমাদরে দশেরে মানুষরে হাতে ডজিটিাল ডভিাইস বশে দ্রুতগততিে পৗেঁছাচ্ছ।ে দশেরে র্অধকে জনগোষ্ঠীর হাতে মোবাইল ফোন আছ।ে আছে ইন্টারনটে এবং আরও ডজিটিাল প্রযুক্ত।ি এখন মানুষ যে পরমিাণ কাগজে যোগাযোগ করে তার চাইতে অনকে বশেি যোগাযোগ করে ইন্টারনটে।ে ই-মইেল এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামরে মানুষরে কাছওে নতুন কছিু নয়। তারা দশেরে ভতেরে ও বাইরে টক্সেট, ছব,ি অডওি-ভডিওি আদান প্রদান কর।ে স্কাইপরে মতো এ্যাপ্লকিশেন দয়িে ভডিওি কনফারন্সেংি করা বা কথা বলা খুবই সাধারণ বষিয়ে পরণিত হয়ছে।ে ফসেবুকরে মতো সামাজকি যোগাযোগ নটেওর্য়াক বাংলাদশেে ব্যাপকভাবে জনপ্রয়ি। আমরা এরই মাঝে ই-কর্মাস, মোবাইল কর্মাস ও মোবাইল ব্যাংকংিয়রে যুগে প্রবশে করছে।ি অনলাইনে লখোপড়া করা, বনিোদন পাওয়া, টভিি দখো বা খবর পড়া বাংলাদশেরে মানুষরে দনৈন্দনি বষিয়ে পরণিত হয়ছে।ে
ঘ. র্সবজনীন সংযুক্তরি প্রসার : দশেে এখন র্৪থ জনোরশেনরে ইন্টারনটে সবো বা ওয়াইম্যাক্স রয়ছে।ে অন্তত দুটি প্রতষ্ঠিান ঢাকা, বভিাগীয় শহর ও কোন কোন জলো শহরে এই সবো প্রদান করছ।ে মোবাইলে ইন্টারনটে ব্যবহার ব্যাপকহারে বড়েছে।ে প্রায় তনি কোটি মানুষ এখন ইন্টারনটে ব্যবহার কর।ে তবে এই হার আরও বহুগুণ বড়েে যাবে যখন আমরা থ্রজিি বা ৪জি মোবাইলরে যুগে পৗেঁছব। আশা করা হচ্ছে য,ে এই বছররে মাঝইে থ্রজিি চালু হবে এবং লাইসন্সেও প্রদান করা হব।ে 
ঙ. র্কম পরকিল্পনা : র্সাবকিভাবে বারো বছর ময়োদী একটি মহাযজ্ঞরে সূচনা হসিবেে ২০০৯ থকেে এখন র্পযন্ত সরকার যসেব পদক্ষপে নয়িছেে তাকে কবেল প্রকৃষ্ট বললইে যথষ্টে বলা হবে না বরং এই সময়রে মাঝে একটি সভ্যতার রূপান্তররে জন্য প্রাথমকি ভতি রচনায় পাওয়া গছেে অভাবনীয় সফলতা। কন্তিু প্রশ্ন হচ্ছে এই সফলতা কি ধরে রাখা যাব?ে প্রথমত এই মূল্যায়ন করা প্রয়োজন যে ডজিটিাল বাংলাদশে গড়ে তোলার জন্য আগামী দনিরে পরকিল্পনাগুলো কি সঠকি রয়ছে।ে দ্বতিীয়ত একটি শঙ্কা সকলরে মাঝইে কাজ করছে য,ে আগামীতে যদি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না আসতে পারে তবে ডজিটিাল বাংলাদশে র্কমসূচীর কি হব।ে
প্রথমত সরকাররে পরকিল্পনার কথাই বলতে হয়। আমি মনে করি এখন র্পযন্ত যে ধরনরে কাজ করা হয়ছেে তার মাঝে র্সাবকি সমন্বয় খুব জরুরী ছলি না। বগিত দনিে মোটামুটভিাবে সকলে মলিইে প্রাথমকি কাজগুলো এমনকি আলাদা আলাদাভাবইে করা সম্ভব হয়ছে।ে কন্তিু বাস্তবতা হচ্ছ,ে আগামীতে সরকারী কাজরে সমন্বয়টি আরও পরকিল্পতি হতে হব।ে সরকার এরই মাঝে আইসটিি মন্ত্রণালয় গড়ে তুলছে।ে ফলে সমন্বয়রে প্রাতষ্ঠিানকি ভতি তরৈি হয়ছে।ে যদি এই মন্ত্রণালয়কে ডজিটিাল বাংলাদশে গড়ার কাজটরি সমন্বয় করতে দয়ো হয় তবে আলগা আলগা কাজ করার বষিয়টি সমন্বতি হয়ে যাব।ে প্রধানমন্ত্রীর র্কাযালয়রে এটুআই থকেে সরকারকে ডজিটিাল করার যসেব প্রচষ্টো এককভাবে করা হচ্ছে সটেি যদি আইসটিি মন্ত্রণালয়রে সমন্বয়ে করা হয়। তবে র্সাবকিভাবে কাজরে অগ্রগতওি বশেি হব।ে এমনকি আইসটিি মন্ত্রণালয় গড়ে তোলার র্সাথকতাও তখন খুঁজে পাওয়া যাব।ে 
অন্যদকিে একটি র্দুবলতার কথা স্পষ্ট করে বলা উচতি। ডজিটিাল বাংলাদশে র্কমসূচীকে রাজনতৈকিভাবে যতটা সম্প্রসারতি করা উচতি ছলি সটেি তমেনভাবে করা হয়ন।ি এজন্য রাজনতৈকিভাবে ডজিটিাল বাংলাদশে র্কমসূচী, এর ধারণা, কাজরে গত,ি পরকিল্পনা ও নীতমিালাসমূহ রাজনতৈকি আলোচনার বষিয় হসিবেে তৃণমূল র্পযায়ে ছড়য়িে দতিে হব।ে
ডজিটিাল বাংলাদশে বষিয়ক অগ্রগতরি বপিরীতে একটি শঙ্কার কথা আমরা প্রায়ই শুন।ি আমরা যদি বাংলাদশেরে স্বাধীনতার সময়কাল থকেে এখন র্পযন্ত কবেলমাত্র তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতরে উন্নয়ন ও বকিাশরে বষিয়টি র্পযালোচনা করি তবে দখেব যে আওয়ামী লীগরে সময়কালে যে ধরনরে র্কাযক্রম গ্রহণ করা হয় সটেি পরর্বতী সরকার (কাকতালীয়ভাবে বএিনপ)ি ক্ষমতায় আসার পরই বন্ধ করে দয়ে। আমরা ২০০১ সালরে খালদো জয়িার সরকাররে র্কমকা- র্পযালোচনা করলে এই বষিয়টি খুবই স্পষ্টভাবে শনাক্ত করতে পারব। আওয়ামী লীগ সইে সময়ে আইসটিরি উন্নয়নে যসেব পদক্ষপে নয়িছেলি তার সবই বন্ধ করে দয়ো হয়। ফলে ২০১৪ সালরে নর্বিাচনে যদি আওয়ামী লীগ না জতেে এবং বএিনপি যদি সরকার গঠন করে তবে এখনকার সচল চাকাটওি অচল হয়ে যাবে এবং ২০২১ সালে আমরা ডজিটিাল বাংলাদশেরে যে স্বপ্ন দখেছি সটেি হয়ত অর্পূণই থকেে যাব।ে এজন্য সরকাররে একটি ধারাবাহকিতা তরৈি হতে হবে যাতে অগ্রগতরি চাকাটি থমেে না যায়।
পাঁচ ॥ একুশরে আগইে : স্বাধীনতার চার দশক পর বাঙালী জাতি তার যে স্বপ্নটাকে ডজিটিাল বাংলাদশে নামাঙ্কতি করছেে মহাজোট সরকার তাকে যথাসম্ভব আন্তরকিতার সাথইে পূরণ করার চষ্টো করে যাচ্ছ।ে এর আগে আর কখনও এমন সময় আসনেি যখন এমনভাবে সমাজরে ডজিটিাল রূপান্তররে বষিয়টি গুরুত্ব পয়েছে।ে যমেনি করে সরকার বষিয়টকিে সামনে তুলে এনছেে তমেনি করে বসেরকারী খাতওে এসছেে প্রাণচাঞ্চল্য। এরই মাঝে আমাদরে সফটওয়্যার ও সবোখাতরে রফতানি বড়েছে।ে তরৈি হয়ছেে আউটর্সোসংি নামক একটি নতুন সম্ভাবনাময় খাত।
আশা করা যায়, আমরা হয়তো ২০২১ সাল র্পযন্ত অপক্ষো করব না, হয়ত তার আগইে আমাদরে ডজিটিাল বাংলাদশে প্রতষ্ঠিতি হব।ে


ঢাকা, ১৭ মে ২০১২ ॥ লখেক তথ্যপ্রযুক্তবিদি, কলামস্টি, দশেরে প্রথম ডজিটিাল নউিজ র্সাভসি আবাস-এর চয়োরম্যান-সাংবাদকি, বজিয় কীর্বোড ও সফটওয়্যার এবং ডজিটিাল বাংলাদশে ধারণা ও র্কমসূচীর প্রণতো ॥ ই-মইেল : সঁংঃধভধলধননধৎ@মসধরষ.পড়স, ওয়বেপজে: িি.িনরলড়ুবশঁংযব.হবঃ (২১ এপ্রলি ২০১২, ঢাকার ইঞ্জনিয়র্িাস ইনস্টটিউিশনে বাংলাদশে আওয়ামী লীগ আয়োজতি ডজিটিাল বাংলাদশে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি বষিয়ক সমেনিাররে মূলপ্রবন্ধ।)

শনিবার, ৫ মে, ২০১২

একুশ শতক ডিজিটাল বাংলাদেশ ॥ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি



মোস্তাফা জব্বার
॥ তিন ॥
সার্বিকভাবে এটি মন্তব্য করা যায় যে, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সময়কালে আওয়ামী লীগ যে থ্রাস্ট নিয়ে আইসিটির জন্য কাজ করেছিল এর আগে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তেমন কিছু ছিল না এবং বেগম জিয়ার সরকার ২০০১-০৬ সময়কালে সেটি অব্যাহত রাখেনি। রাজনীতির পাকে ফেলে আওয়ামী লীগ সরকার এই খাতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল তাকে রিভার্স করা হয়। ফলে সেই সময়ে প্রায় সব কাজই স্থবিরতার মাঝে লটকে যায়। এরপর ফখরুদ্দীন সরকার তার শাসনকালের প্রথম বছরে বেগম জিয়ার মতোই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে অবহেলা করতে থাকেন। হতে পারে যে, তাদের জন্য সেই সময়ে অগ্রাধিকার হিসেবে রাজনীতিই ছিল। তবে ২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন সরকার অন্যান্য বিষয়ের মতো আইসিটিকেও গুরুত্ব দিতে শুরু করে। এই সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা সংশোধন করার প্রয়াসটি প্রশংসা করার মতো। যদিও সরকার তার মেয়াদ শেষ করার আগে তার নীতিমালাটি প্রণয়ন সম্পন্ন করতে পারেনি, তবুও তাদের উদ্যোগের ফলেই পরবর্তী সরকার ২০০৯ সালের নীতিমালাটি অতি দ্রুত প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি বিশাল কাজ ছিল ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে তখনকার সরকার দেশটিকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করানোর ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক তৈরি করেছিল।
তিন. ডিজিটাল বাংলাদেশ ॥ রূপরেখা : ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে বর্তমান সরকারের একটি অঙ্গীকার যার মর্মার্থ খুব স্পষ্ট; ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আমরা এক বাক্যে বলি, ‘একুশ শতকের সোনার বাংলা।’ কেউ কেউ একে বলেন, ‘সুখী-সমৃদ্ধ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ।’ আমি বলি, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে সেই সুখী, সমৃদ্ধ, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ যা সব প্রকারের বৈষম্যহীন, প্রকৃতপক্ষেই সম্পূর্ণভাবে জনগণের রাষ্ট্র এবং যার মুখ্য চালিকাশক্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। এটি বাঙালীর উন্নত জীবনের প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা। এটি বাংলাদেশের সকল মানুষের ন্যূনতম মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর প্রকৃষ্ট পন্থা। এটি একাত্তরের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপকল্প। এটি বাংলাদেশের জন্য স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র দেশ থেকে সমৃদ্ধ, উন্নত ও ধনী দেশে রূপান্তরের জন্য মাথাপিছু আয় বা জাতীয় আয় বাড়ানোর অঙ্গীকার। এটি বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সোপান। এটি একুশ শতকের সোনার বাংলা।’ আমি আমার বইতে এমনটি অত্যন্ত স্পষ্ট করেই বলে আসছি।
৬ ডিসেম্বর ২০০৮ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করার সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা তাতে যুক্ত হয়। ১১ ডিসেম্বরের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় সেটি অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর তার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে, তাতে ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচী ঘোষণা করে। খুব সঙ্গত কারণেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হওয়া আওয়ামী লীগের জন্য এটি হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি কর্মসূচী। যদিও একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচীর প্রত্যাশা বা স্বপ্নটির বিষয়ে তেমন কোন দলির দলটির পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়নি তথাপি স্বপ্নটি হচ্ছে ২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারের রূপকল্প ২০২১-এরই পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন। ২০০৭ সাল থেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচী নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। তাতে এর রূপরেখা অনেকটাই বর্ণিত হয়েছে। আমি এখানে কেবল কয়েকটি কর্মসূচীর কথা উল্লেখ করছি।
ক ॥ জনগণের রাষ্ট্র : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশাটি ছিল বাংলাদেশ একটি জনগণের রাষ্ট্র হবে, যাকে সত্যিকারের প্রজাতন্ত্র বলা হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিই হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি। ধর্ম বর্ণ, গোত্র বা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের কোন কর্মকা- পরিচালিত হবে না। রাষ্ট্র তার রাষ্ট্রভাষা এবং বাঙালী জাতির জাতিসত্তা ও সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশসহ সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে সংবিধানে বর্ণিত সব সুযোগ-সুবিধা সমভাবে প্রদান করবে এবং জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করবে।
আমরা স্বপ্ন দেখি, এই সময়ের শেষে পুরো দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে কোন মানুষ বসবাস করবে না। রাষ্ট্রের সকল নাগরিক অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ মানুষের সব মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারবে এবং সমাজে আর্থিক ও অন্য সব প্রকারের বৈষম্য বিলীন হয়ে যাবে এবং সুশাসন নিশ্চিত হবেÑদুর্নীতি বলতে কিছু থাকবে না। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়াদিসহ সব কিছুতেই জনগণের কর্তৃত্ব ও অংশগ্রহণ থাকবে। এটি ধনিক শ্রেণীর একচেটিয়া লুটপাটের ক্ষেত্র হবে না।
খ ॥ ডিজিটাল সরকার : বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বাধীন ও সার্বভৌম সংস্থা। এটি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল রাষ্ট্র পরিচালনা করে। আমরা স্বপ্ন দেখি, জাতীয় সংসদই হবে রাষ্ট্রের সব কর্মকা-ের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতির পরিপূর্ণ বিকাশের স্বার্থে সংসদের কার্যক্রমসহ সব রাজনৈতিক কর্মকা- ডিজিটাল হবে। নির্ধারিত সময়ের নির্বাচনে ডিজিটাল পদ্ধতির পরিপূর্ণ ব্যবহারসহ নির্বাচন-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদসহ সব নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্থায় জনগণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে তার মতামত জানাতে পারবে, রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নিতে পারবে ও নির্বাচনের বাইরেও জনমতের প্রতিফলন ঘটানো যাবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকার ও প্রশাসন সম্পর্কে আমাদের স্বপ্ন হলো; ডিজিটাল বাংলাদেশের সরকার হবে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ও ডিজিটাল। সেটি হবে দক্ষ ও জনগণের সেবক। সরকারের সকল তথ্য নাগরিকেরা যে কোন সময় যে কোন স্থান থেকে ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে জানতে পারবে। বিচার হোক আর সরকারের কাছে কোন আবেদন করা হোক বা আবেদনের ফলাফল জানা হোক, কোন তথ্য পাওয়া হোক বা দেওয়া হোক, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ডিজিটাল যন্ত্রে ডিজিটাল উপায়ে নাগরিকেরা সরকারের কাছে পৌঁছতে পারবে। কাউকে সশরীরে সরকারী অফিসে আসতে হবে না। সরকার যাবে জনগণের কাছে। ফাইলে বন্দী থাকবে না কোন তথ্য। সরকারের সব তথ্য থাকবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত করা। স্থানীয় সরকারসহ সরকারের সর্বস্তরের সব নাগরিক সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে দক্ষতার সঙ্গে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো হবে। সরকারের কাজ করার পদ্ধতিতে কোন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকবে না এবং কোন স্তরে কোন প্রকারের দুর্নীতি থাকবে না। দেশের প্রশাসন, শিক্ষা, ভূমিব্যবস্থা, ভূমি নিবন্ধন, যাতায়াত, যোগাযোগ ও পরিবহন, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানা, আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা, বিচার বিভাগ, প্রতিরক্ষা ও স্বাস্থ্য ইত্যাদিসহ সব কর্মকা- ডিজিটাল হবে।
গ ॥ ডিজিটাল জীবনধারা : দেশের সংসদ, সরকার ও জীবনযাপনের সব ব্যবস্থা ডিজিটাল হবার ফলে দেশের মানুষ একটি ডিজিটাল জীবনধারায় বসবাস করবে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিকতা, রাজনীতি, জীবনযাপনসহ সামগ্রিক জীবনধারা ডিজিটাল পদ্ধতির হবে।
ঘ ॥ সার্বজনীন সংযুক্তি : পুরো দেশটির প্রতি ইঞ্চি মাটি যে কোন ধরনের তার বা বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থায় উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগে যুক্ত থাকবে। বিশ্বের সব দেশের সব প্রান্তের সঙ্গে বিরাজ করবে সেই সংযুক্তি। এই সংযুক্তিতে যুক্ত থাকা দেশের সব নাগরিকের একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য হবে। এই অধিকার থেকে কোন নাগরিককে বঞ্চিত করা যাবে না।
চার ॥ ডিজিটাল বাংলাদেশ ॥ অগ্রগতি : ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা প্রদান করে সরকার এরই মাঝে তিনটি বছরের বেশি সময় পার করেছে। খুব সাধারণভাবে হয়ত অনেকের কাছেই এটি দৃশ্যমান হবে না যে, এই সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে আমরা কতটা পথ এগিয়েছি। অনেকেই হয়ত বলবেন, ২০০৮ সালে যে জীবন ছিল জীবন তো এখনও তেমনই মনে হচ্ছে। তবে একটু গভীরভাবে যদি দেখা যায় তবে অনুভব করা যাবে যে, পরিবর্তনটা ব্যাপক এবং এই সামান্য সময়ের মাঝে যতটা পথ আমরা পার হয়েছি সেটি তূলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
এই অগ্রগতির খাতগুলোকে আমরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দেখতে চাই।
ক ॥ জনগণের রাষ্ট্র গড়ার পথে : বিগত তিন বছরে দেশটিকে জনগণের রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সরকার অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয়টি ছিল দেশের সংবিধানকে তার শেকড়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করা। এই সময়ে বারবার কাটা-ছেঁড়া করা সংবিধানের সংশোধন, সার্বিক দারিদ্র্য হার কমিয়ে আনা, দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক একটি সরকার পরিচালনা, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করাসহ নানাভাবে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা হয়েছে। গণমাধ্যম, ব্যক্তি ও রাজনৈতিক মহলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিরঙ্কুশভাবে বজায় রাখার একটি ঐতিহাসিক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে এই সময়ে। ইভিএম ও ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার করে নির্বাচনকে ডিজিটাল করার সাহসী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এই সময়ে। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর পাশাপাশি মৌলিক চাহিদার সঙ্গে সম্পৃক্ত সেবাসমূহের সম্প্রসারণ করে ডিজিটাল যুগের সূচনা করায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় সমৃদ্ধ হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রায় ৭ শতাংশের কাছাকাছি উন্নীত করা, ৪ লাখ চাকরি প্রদান ও ৬৮ লাখ কর্মসংস্থানসহ নানা পর্যায়ের অবকাঠামো উন্নয়ন করে নাগরিকদের জীবন মান উন্নয়ন করা হয়েছে। একটি সুখী-সমৃদ্ধ-উন্নত সোনার বাংলা গড়ে তোলার এই প্রয়াসকে একটি স্বর্ণোজ্জ্বল সময় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। আমরা এটুকু প্রত্যাশা করি যে, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ২০২১ সালে আমরা সত্যি সত্যি একটি স্বপ্নের বাংলাদেশে বসবাস করব।

ঢাকা, ০৪ মে ২০১২ ॥ লেখক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা ও কর্মসূচির প্রণেতা ॥ mustafajabbar@gmail.com, www.bijoyekushe.net